মানুষের জীবনে অন্যতম বড় ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে বাড়ি কেনা। হোক সেটা পৃথিবীর যে কোনো দেশেই। তবে কানাডায় বাড়ি কেনার কিছু ধাপ রয়েছে। অনেকেই হয়তো ফার্স্ট টাইম বাড়ি কিনছেন অথবা কিনবেন কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না যে কীভাবে শুরু করবেন অথবা কার সাথে আলাপ করবেন। আমাদের দেশে বাড়িঘর কেনা এবং কানাডায় বাড়িঘর কেনার পদ্ধতি একদমই ভিন্নরকম।
বাড়ি কেনার জন্য আপনাকে প্রথমেই যোগাযোগ করতে হবে বাড়ি কেনা-বেচায় নিয়োজিত আছেন এমন একজন লাইসেন্সড রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সাথে। সাধারণত রিয়েল এস্টেট এজেন্ট আপনাকে বাড়ি কেনার ধাপগুলো অতিক্রম করতে গেলে কী কী করতে হবে সে ব্যাপারে গাইড করতে পারবেন।
তবে কিছু ধাপ রয়েছে যেগুলো আপনার নিজেরও জানা প্রয়োজন।
কানাডায় আপনি দুটি উপায়ে বাড়ি কিনতে পারেন। প্রথমত আপনি পুরোটা ক্যাশ দিয়ে কিনতে পারেন অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে লোন নিয়ে কিনতে পারেন যেটাকে আমরা মর্টগেজ বলি। এখানে আমরা আলোচনা করব ব্যাংকের মাধ্যমে লোন নিয়ে বাড়ি কেনার ধাপগুলো-
১. প্রথমেই আপনি জেনে নিবেন আপনি কত দামের মধ্যে বাড়ি কেনার জন্য উপযোগী। সেটার জন্য আপনাকে ব্যাংকে অথবা মর্টগেজ ব্রোকারের কাছে যেতে পারেন। ওনারা আপনার ইনকাম, ক্রেডিট রিপোর্ট এবং আপনার ডাউনপেমেন্ট এর পরিমান দেখে আপনাকে একটা ধারণা দিয়ে দেবেন যে আপনি কত দামের বাড়ি কিনতে এলিজেবল। আপনি চাইলে একটা Pre-Approval নিতে পারেন। এখন আপনি জেনে গেলেন আপনার সর্বোচ্চ ক্রয়ক্ষমতা কত।
২. আপনি আপনার রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সাথে আলোচনা করে আপনার Approval লিমিট জানাবেন আপনার ক্রয়ক্ষমতার ভেতর আছে সে বাড়িগুলোই দেখা শুরু করবেন।
৩. যখন আপনার কোনো বাড়ি পছন্দ হয়ে যাবে তখন আপনার এজেন্টকে জানাবেন এবং তার সাথে আলাপ করে ধারণা নিবেন যে এই বাড়ি কিনতে গেলে দামাদামি (নেগোশিয়েশন) করা যাবে নাকি। বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে দামাদামি করা একটা নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। তবে অনেক বাড়ি কেনার সময় নেগোশিয়েশন করা সম্ভব হয় না যখন অনেক ক্রেতা একসাথে একটা বাড়ি কেনার জন্য আগ্রহ দেখাবে।
৪. আপনার পছন্দের বাড়িতে আপনার এজেন্ট আপনার হয়ে অফার দিবেন এবং সাথে ডিপোজিট এমাউন্ট কত দিবেন সেটা উল্লেখ করবেন। অফার দেবার সময় আপনি চাইলে কন্ডিশন দিতে পারেন। তবে কন্ডিশন দেয়া কোনো বাধ্যগত নিয়ম না। কন্ডিশন সাধারণত হয় ফাইন্যান্সিং, ইন্সপেকশন এবং আরো অনেক কিছুর ওপর। কন্ডিশন দেবার মানে হল আপনি বাসাটা কন্ডিশন দিয়ে কিনবেন তবে যদি কন্ডিশন না পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনি ডিল/অফার ওই কন্ডিশনে দেয়া সময়ের মধ্যে তুলে নিতে পারবেন এবং আপনার ডিপোজিট আপনাকে পুরো ফেরত দেয়া হবে।
আপনার এজেন্ট আপনার হয়ে আপনার জন্য অফার তৈরী করবেন (যেটা সাধারণত অন্টারিও গভর্মেন্টের অনুমোদিত রিয়েল এস্টেট এর কিছু নির্দিষ্ট ফর্মে) বাড়ি বিক্রেতার এজেন্টকে দেবার জন্য। সেলারের এজেন্ট আপনার দেয়া অফার সেলারকে প্রেজেন্ট করবেন। আপনার এজেন্ট যেমন আপনার হয়ে দামাদামি করবেন, অফার বানাবেন এবং আপনার বেস্ট ইন্টারেস্ট এর জন্য কাজ করবেন বিপরীত দিকে সেলারের এজেন্টও সেলারের পক্ষে কাজ করবেন।
অফারে আপনি আরো উল্লেখ করবেন যে আপনি বাসাটা কবে ক্লোজ করবেন। ক্লোজ মানে হচ্ছে আপনি বাসার দায়িত্ব কবে তুলে নিবেন অথবা কবে আপনি বাসার চাবি পাবেন। ধরেন আপনি আজকে কোনো বাসায় অফার দিলেন তো আপনি অফারে উল্লেখ করবেন যে আপনি কয়দিন পর বাসা বুঝে নিতে চান। এক্ষেত্রে আপনি এবং সেলার একটা মিউচুয়াল ডেট ঠিক করে সেই ডেট এ ক্লোজ করবেন। যেটা ৩০ দিন ও হতে পারে আবার ৩ মাসও হতে পারে।
৫. আপনার অফার যদি ফাইন্যান্সিং/মর্টগেজ কন্ডিশনে থাকে তাহলে ওই কন্ডিশনে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে আপনার ব্যাংক/মর্টগেজ এজেন্ট আপনার মর্টগেজের এপ্রুভালের ব্যবস্থা করবেন। আপনার অফারের কপি আপনি ব্যাংক অথবা মর্টগেজ ব্রোকারের কাছে দিয়ে দিবেন এবং উনারা আপনার জন্য মর্টগেজের ব্যবস্থা করবেন। আপনি যদি ইন্সপেকশন কন্ডিশন অথবা অন্য যে কোনো কন্ডিশন দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে কন্ডিশনে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে কন্ডিশনগুলো পূর্ণ করতে হবে। কন্ডিশন পূর্ণ হলে আপনাকে waiver ফর্মে সাইন করে কন্ডিশন তুলে নিতে হবে। তখন আপনার ডিল ফাইনাল হবে। আর যদি কন্ডিশন পূর্ণ করতে না পারেন তবে মিউচুয়াল রিলিজ ফর্মে সাইন করে অফার তুলে নিতে পারেন এবং আপনার ডিপোজিট আপনাকে পূর্ণ ফেরত দিবে সেলারের ব্রোকারেজ।
৬. আপনার ডিল ফাইনাল হবার পর আপনার হাতে সময় থাকবে ক্লোজিং ডেট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংক / মর্টগেজ ব্রোকার আপনার পুরো ফাইন্যান্সিং/মর্টগেজের ব্যবস্থা করবে এবং আপনিও নতুন বাসায় ওঠার জন্য প্রিপারেশন নিবেন।
৭. আপনার পুরো ডিল/ট্রান্সেকশনটা ক্লোজ করতে আপনার একজন ল-ইয়ার লাগবে। ল-ইয়ার আপনার হয়ে আপনি সম্ভাব্য কেনা বাড়ির ওপর টাইটেল সার্চ করবেন। সাধারণত উনি দেখবেন যে প্রপার্টির ওপর কোনো লিয়েন (Lien) আছে কিনা অথবা কোনো সমস্যা আছে কিনা।
৭. ক্লোজিংয়ের ২/১ দিন আগে অথবা কিছুদিন আগে আপনার মর্টগেজ ইন্সট্রাকশন চলে যাবে আপনার ল-ইয়ার এর কাছে। ল-ইয়ার আপনাকে বলবে নতুন বাড়ির ওপর একটা হোম ইন্সুরেন্স নিতে এবং ইন্সুরেন্সের পলিসি নাম্বার আপনার কাছে চাইবে।
৮. ক্লোজিং Cost জিনিষটা মাথায় রাখতে হবে। ক্লোজিং cost হচ্ছে আপনার ডাউনপেমেন্ট দেবার পরও কিছু লিগাল ফি আছে। যেমন ল্যান্ড ট্রান্সফার ফি (ফার্স্ট টাইম বায়ারটা সিটি থেকে একটা বিশাল ডিসকাউন্ট পাবেন), টাইটেল সার্চ এবং আরো কিছু গভর্নমেন্ট ফি। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কোন এরিয়াতে কত দামের বাড়ি কিনছেন তার ওপর। আপনি অনলাইন সার্চ করেও একটা আনুষঙ্গিক ধারণা নিতে পারেন আপনার ক্লোজিং cost কত হতে পারে তার ওপর । তবে আপনার ল-ইয়ার আপনাকে পুরো Exact এমাউন্টটাই বলতে পারবেন। ক্লোজিংয়ের আগে আপনার ল-ইয়ার আপনাকে আপনার ডিপোজিট দেবার পর অবশিষ্ট ডাউনপেমেন্ট এবং ক্লোজিং cost হিসাব দিয়ে টোটাল এমাউন্ট নিয়ে আসতে বলবে ওনার অফিসে ক্লোজিংয়ের আগে অথবা আপনাকে এই অ্যামাউন্টটা কোথায় জমা দিতে হবে সেটার ইন্সট্রাকশনও দিবে। এরপর আপনাকে সাইন করতে বলবে পুরো ডিলটা পরিপূর্ণ করার জন্য।
৯. ব্যাংক সাধারণত ক্লোজিংয়ের আগে আপনার মর্টগেজের এমাউন্ট ল-ইয়ার এর ট্রাস্ট একাউন্টে দিয়ে দেয়। ক্লোজিংয়ের দিন আপনার ল-ইয়ারের ট্রাস্ট একাউন্টে ব্যাংক থেকে দেয়া লোন/মর্টগেজের এমাউন্ট আপনার ল-ইয়ার সেলারের ল-ইয়ার এর ট্রাস্ট একাউন্টে জমা করবেন। পুরো ব্যাপারটা সেইদিন বিকেল ৫ টার মধ্যে ( অফিস সময়সীমা) শেষ করতে হবে। এটাকে ফান্ড ট্রান্সফার বলে রিয়েল এস্টেটের ভাষায়। ফান্ড পেয়ে গেলে সেলার পক্ষের ল-ইয়ার কন্ফার্ম করলে আপনার পুরো ডিল ক্লোজ হয়ে যাবে এবং আপনার ল-ইয়ার আপনাকে আপনার নতুন বাসার চাবি দিয়ে দিবেন।
এভাবেই হয়ে গেলেন আপনি একটি বাড়ির মালিক !
আপনার বাড়ি কেনার বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে আমাদের ফোন করুন এই নম্বরে 647-882-8529। আমরা আপনাদের সাথে আছি। আমাদের তথ্য প্রদান একদম ফ্রি, এবং এজন্য আমাদের কাছ থেকে বাড়ি কেনা-বেচার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।